ঈদ ছুটিতে ঘরে বসেই ছিলাম৷ সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরী অভিনীত সিনেমা ‘শান’ নিয়ে অফিস কলিগের প্রশংসামূলক পোস্ট দেখার পরে ছবিটি দেখার আগ্রহ পেলাম। তবে হাউসফুল হওয়ায় ঈদের দিন অনেক চেষ্টা করেও সিনেপ্লেক্সে টিকেটের ব্যবস্থা করা গেল না।

বাংলা সিনেমার ব্যপারে যাদের নাক ছিটকানো স্বভাব রয়েছে তাদের কাছে হয়তো কিছুটা সার্কাজম মনে হতেই পারে। তবে দ্বিতীয় দিনের শেষ শোতে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে ‘শান’ দেখে এইটুকু বলতে পারি- আমার টাকা কিংবা সময় কোনটাই বিফলে যায়নি।

চলচ্চিত্র: শান
পরিচালক: এম রাহিম
কুলাকুশলী: সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরী, তাসকিন রহমান, মিশা সওদাগর প্রমুখ
দেশ: বাংলাদেশ
সাল: ২০২২
রেটিং: ৩/৫

শান ছবির গল্প

প্রথমেই আসি গল্পের কথায়। মানবপাচারকারী একটা চক্রকে ঘিরে গল্পের বিস্তার ঘটেছে৷  সত্যি বলতে গল্পের প্রথমভাগ দেখে যারপরনাই হতাশ হয়েছি।

পারিবারিক কিংবা রোমান্টিক গল্প বলতে যা বুঝে থাকি, একদমই তা-ই ছিল। অর্থাৎ একেবারেই গতানুগতিক। যা আপনাকে কিছুটা হলেও হতাশ করবে।

তবে কথায় আছে হতাশার বিপরীত পাশেই রয়েছে মুগ্ধতার অবস্থান। ‘শান’ সিনেমার দ্বিতীয় পর্ব দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ ও আপ্লুত।

বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরতে যে বেশি বাকি নেই এ যেন তারই আভাস৷ দ্বিতীয় পর্বের প্রথম থেকেই গল্পে ছিল সাসপেন্স ও উৎকন্ঠার ছড়াছড়ি। টুইস্ট ও সাইড ক্যারেক্টারদের কমেডিও ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণেই। যা শেষ পর্যন্তই আপনাকে সিনেমা হলে বসিয়ে রাখবে৷

ছবির শেষদিকে সিয়ামের অসাধারণ কিছু ডায়লগ সত্যিই মনে রাখার মতো।

তবে একজন চিত্রনাট্যকার হিসেবে মনে হয়েছে গল্পের প্রথমার্ধ যেন প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা লেগেছে৷

আরও পড়ুন: ঈদে ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘গলুই’ যেসব সিনেমা হলে

অভিনয় কেমন ছিল সিয়ামের

নায়ক সিয়ামকে যারা রোমান্টিক মুভিতে দেখে অভ্যস্ত। তাদের বলছি অ্যাকশন হিরো হিসেবেও যে সিয়াম কতটা সফল সেটা দেখার জন্য হলেও আসুন।

শান নামের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে শানের মতোই ধারালো অভিনয় দেখা গেছে সিয়ামের৷ আর সিয়ামের প্রথম এন্ট্রি একেবারেই হলে দাঁড়িয়ে শিস দেয়ার মতোই৷

কেমন করেছেন পূজা চেরী

অপরদিকে পূজা যেন নায়িকা হিসেবে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছে ভালোবাসার মানুষকে। তার বেশ কিছু রোমান্টিক লুক এবং ডায়লগ শুনে সেই প্রথম জীবনের প্রেমের কথাই হয়তো মনে পড়ে যাবে আপনার।

তাসকিন অ্যান্টি হিরো হিসেবে বরাবরই দুর্দান্ত৷ যার প্রমাণ সে আগেই দিয়েছে৷ এই সিনেমায়ও যেন তার ব্যতিক্রম নয়। তার লুকের যোগ্য ব্যবহারই সে করেছে এই সিনেমাতেও।

মিশা সওদাগরও বেশ মানানসই ছিলেন তার চরিত্রে।

শান ছবির সেট ও চিত্রগ্রহণ

সিনেমায় আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেট ডিজাইন ও ক্যামেরার কাজ। পুরো ছবি জুড়েই এই দুইয়ের প্রশংসা না করে পারছি না।

পরিচালক এবং এই টিমের সাথে জড়িতরা এর জন্য একটা পিওর ধন্যবাদ পেতেই পারে। এছাড়া সিয়াম-পূজার রোমান্টিক গানগুলোও প্রশংসার দাবিদার৷

আমাদের বর্তমান সময়ে সিনেমার জন্য সবচেয়ে বেশি অভাব ভালো গল্পের। ‘শান’ সিনেমার গল্প মৌলিক এবং নতুনত্বও খুঁজে পেয়েছি আমি৷ প্রথমার্ধ হতাশ করলেও শেষাংশ আমাকে আপ্লুত করেছে দারুণভাবে৷

লাস্ট অব অল এটাই বলব, ‘শান’ মৌলিক ও উপভোগ্য সিনেমা। সিনেমা হলে আসুন, বাংলা সিনেমার আলোচনা কিংবা সমালোচনা যেটাই করুন, সিনেমা দেখেই করুন।

লিখেছেন: মোহাইমিনুল নিয়ন, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র সমালোচক