আজকে একটা সিনেমা দেখলাম। দেখার পর মনে হলো। একটা সিনেমা সিনেমা খেলা খেলা যায়। তাই এই লেখার নাম দিলাম খেলবা নাকি একটা সিনেমা খেলা? সিনেমা খেলা কী? এইটা বোঝার কোনো দরকার নাই। আমি কয়েকটা গল্প কমু। খালি এইগুলো মনযোগ দিয়া পড়লেই খেলা খতম।

চলচ্চিত্র: দেবী
পরিচালক: অনম বিশ্বাস
কলাকুশলী: জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শবনম ফারিয়া, ইরেশ জাকের, অনিমেষ আইচ
দেশ: বাংলাদেশ

সাল: ২০১৮
রেটিং:৩/৫
এই খেলায় আমি ১৭টা গল্প কওয়ার কোশেস করমু। ভয় পাওয়ার দরকার নাই। ১৭ মানে ১৭ না। আমাগো দ্যাশে মানে বরিশালে কয়-হতারোডা (১৭) কাম লইয়া বইছো? হরতে পারবি? মানে হলো, অনেকগুলো কাজ নিয়া বসছ? করতে পারবা? তার মানে অনেকগুলো গল্প বলব। তবে নিশ্চিত থাকেন ১৭টার বেশি অইব না। একখান কথা বইলা রাখি, এইডা কিন্তু কোনো সিনেমা রিভিউ না। যাস্ট আজাইরা আলাপ।
গল্প-১
সিনেমা দেইখা বাইর হইলাম। লিফটে উঠব। তাড়াহুড়ো করে কোনো মতে লিফটে উঠলাম। লিফট সুন্দরী মেয়ে দিয়া ঠাসা। তাকাইয়া দেহি পোলাপানগুলো সব উপরের দিকে তাকাইয়া রইছে। ভাবলাম, আরে বাবা পোলাপান তো দেহি সেই রকমের সাধু হইয়া গেছে। সুন্দরীদের দিকে না তাকাইয়া উপরের দিকে তাকাইয়া আছে। আমিও তাকাইলাম। আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। উপরে দেখি আয়না ফিট করা, মানে গ্লাস। আমি চোখ নিচে নামাইয়া ফালাইলাম। ক্যান? কমু না। খালি মনে পড়ল, ভারতীয় একটা পত্রিকায় একটা নিউজ বের হইছে। ব্রা বিভ্রাটে কাজল, ঠিক করতে গিয়ে আরও বিড়ম্বনা। তা আবার কেডায় জানি ভিডিও করছে। এই ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল। এই পত্রিকাটা নিউজ তো করছে করছে আবার ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দিয়া কইছে, দেখুন ভিডিও সহ। আমি ভাবি লিফটের মধ্যে আবার সিসি ক্যামেরা নাই তো! আল্লাহ মালুম।গল্প-২
কতগুলা পোলা মাইয়া বইসা আড্ডা দিতাছে। বয়স কত অইব? ১৭ কি ১৮। হঠাত একটা মাইয়ার দিকে তাকাইয়া সবাই কইয়া উঠল হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। মাইয়া তো অবাক। আরে সবাই জানলো কী করে? বোকা মেয়ে। ফেসুবকে লেখা থাকে না! আরও অবাক করে দিয়ে বন্ধুরা ব্যাগের ভেতর থিকা কেক বাইর করল। মাইয়াটা আবেগে কাইন্দালাইলো। আমি খাড়ায়া খাড়ায়া দেখতিছি। আমার পাশে কতগুলা আরেক দঙ্গল মাইয়া আর পোলা খাড়া। একটা মাইয়া কয়, খুব খিদা লাগছে। কেকটা দেইখা খাইতে ইচ্ছা করতাসে। আমি ভাবি, খালি খালি ঢাকায় রেস্টুরেন্ট বাড়তাছে!

গল্প-৩
এফডিসির সামনে দিয়া আসতাছি। এক লোক কয় ভাই বাড্ডার কোনো বাস আছে? আমি কই, আছে হাতিরঝিলের মধ্যে বোট। লোকটা আমার দিকে ভ্যাটকাইয়া তাকাইলো। মনে মনে কয়, হালায় কয় কী? কইলাম বাসের কথা কয় বোটের কথা। লোকটা কইল, ভাই বাস নাই? আমি কই, আছে। এই সামনে গিয়া ডান দিকে বোট বাম দিকে বাস। লোকটা কয়, আপনে যাইবেন কই? আমি কই বনশ্রী। লোকটা কয়, ভাই আমারে নিয়া যান। মধ্য বাড্ডা যাব। আমি এই রাস্তা চিনি না। আপনার লগে গেলেই হবে। আমি ও লোকটা হাঁটি। পরিচয় হয়। আমার আবার শখ, কারো সঙ্গে পরিচয় হইলেই জিগাই, বিয়া করছেন? ওনারেও করলাম। কইলো, হ করছি। ছয় বছর। একটা মাইয়া। ঢাকায় থাকি। বউ সহ। আমি কই, বাবা মা আছে? উনি কয়, না। দুজনই মারা গেছে। মনটা খারাপ কইরা আরও কইলো, ভাই বড় কষ্ট দিলেন। আমার মাইয়াটা পালতাছি। বুঝতাছি বাবা মা পোলাপাইনের জন্য কত কষ্ট করে। আমি ওনার কষ্ট হালকা করার জন্য কইলাম, আমারও মা নাই। দেড় বছর হয় মারা গেছে। উনি কইলো, আমার দুইজনই নাই। আমি আর মা বাবা নিয়া কথা বাড়াই না। দুজনে গিয়ে চক্রাকার বাসে উঠি। উনি মোবাইল গুতায়। আমি ভাবি মায়ের কথা। মাকে কি উনার মতো আমি মনে করি? সত্য কথা বলতে, মনে করি না। এত এত কাজের ভীর মাকেও মনে পড়ে! এই ঢাকা বড্ড ব্যস্ত। মাকে মনে করার সময় দেয় না। বাস থামে। আমি নেমে পড়ি। উনি যাবেন উনার রাস্তায়। বললেন, ভাই, আল্লাহ ভালো মানুষের সঙ্গে দেখা করাইয়া দিছে। নইলে কিযে ভোগান্তি হইত। আমি উনার সম্পূর্ণ পরিচয় জানতে চাই। উনার নাম তসলিম হোসেন। একটা ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।

গল্প-৪
ফুটপাত ধরে হাঁটছি। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে কথা বলছে। মেয়েটা বেশ ঢঙ্গি। কয়েকজন তরুণ সিকিউরিটি ম্যান হেঁটে যাচ্ছে। একজন আরেকজনকে বলল, মেয়েটারে দেখলি? কেমন কেমন লাগতাছে। আমি তাকিয়ে দেখি ও মেয়ে নয়, হিজড়া।
গল্প-৫
সিনেমাটা নিয়ে বলার আগে আরেকটা সিনেমার কথা মনে পড়ল। ওই সিনেমার নাম ঘাসফুল। তৈয়ার করছেন পরিচালক আকরাম খান। গত বছর যার খাঁচা সিনেমাটা বাংলাদেশ থিকা অস্কারের জন্য পাঠানো হইছিল। মনোনীত হয় নাই। ওই সিনেমাটা দেখতে গিয়া খুব ভালো লাগছিল। কারণ সিনেমার গল্পটার মধ্যে দ্বন্দ্বটা ছিল অসাধারণ। মাতৃত্বের দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব কী? তা পরে কমুনে। একটা ছেলেকে নিয়া ছেলের মা ও দাদীর দ্বন্দ্ব। ছেলের মা তার ছেলেকে নিজের কাছে রাখার দাবীদার। দাদী তার নাতির মধ্যে মৃত ছেলেরে খুইজা পাইছে। এই ছেলেরে সে আর ছাড়ব না। এই হলো গল্পের দ্বন্দ্ব। তো এই মাতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়া সিনেমাটা ভালোই আগাইতেছিল। হঠাত এইটা টার্ন করল অন্যদিকে। মাতৃত্ব ফাতৃত্ব রাইখা সিনেমাটা পড়ল গিয়া আরেক ফান্দে। মানে ফোকাসটা গিয়া চইলা গেল অন্য জায়গায়। তারপর যে সিনেমাটার এই দ্বন্দ্বটা কই গেল সারা সিনেমায় তন্ন তন্ন কইরা খুঁইজা পাইলাম না। আমি নিজেই দ্বন্দ¦ খুঁজতে যাইয়া ধন্দে পইড়া গেলাম। পরিচালক কি ইচ্ছা কইরাই দর্শককে দ্বন্দ্বের ওই কেন্দ্র থেইকা সরাইয়া ফালাইছে? নাকি পরিচালক নিজেও বুঝে নাই যে, তারা যেই গল্পটা বলার চেষ্টা করছে, তার মূল দ্বন্দ্ব মাতৃত্বের। যা তাদের অগোচরেই রয়ে গেছে। কেন এই প্রসঙ্গ আনলাম, তা পরে কই। আসেন তার আগে বুঝি দ্বন্দ্ব জিনিসটা কী?দ্বন্দ্বর কথা বললে সিনেমার এক মাস্টার মশায়কে মনে পড়ে। ওই ভদ্রলোকের নাম সের্গেই আইজেনস্টাইন। উনি এক সময় থিয়েটার করতেন। পরে সিনেমা করতে আসেন। ভদ্রলোক দ্বন্দ্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এতটাই গভীরে গিয়েছিলেন যে, গল্পের দ্বন্দ্ব তো থাকেই, সময়ের দ্বন্দ্ব এমনকি স্পেসের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেছেন। যারা চলচ্চিত্রের শিক্ষার্থী, সেই সঙ্গে তাঁর দ্য ফিল্ম সেন্স ও দ্য ফিল্ম ফর্ম বই দুইটা পড়া আছে তারা সহজেই ধরতে পারবেন। একটু থিউরিটিক্যাল। আর যারা আমার মতো আম পাবলিক। তাদের জন্য বলি। গল্পের মধ্যে দ্বন্দ¦ টা হলো এই সিনেমার মতো। নায়ক নায়িকার সঙ্গে প্রেম চলছে। দুজন প্রেমে এতটাই মজেছেন যে এখন আর বিয়ে না করলে হচ্ছে না। দুজনই বিয়েতে রাজি। দুই পরিবারও রাজি। হঠাত নায়িকাকে কেউ একজন জানালো, সে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সেই ছেলেটি জারজ সন্তান। এবার মেয়েটি পড়ল মহাবিপদে। কী করবে সে? এই সঙ্গে আমরা যারা সিনেমার দর্শক আমরাও হায় হায় করে উঠলাম। কী করবে সে? নড়েচড়ে বসলাম। এই ছবি দেখতেই হবে। পরিচালকও এই কী করবের ফাঁদে ফেলে আমাদের ছবির শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। ছবির শেষে জানলাম, আসলে সে জারজ না। ছেলেটির বাবা তাঁকে মায়ের পেটে রেখেই মারা যায়। বিয়ের আগে তারা ছিল অন্য গ্রামে। এই গ্রামের কেউ এটা জানত না। এই যে কী করবের ফন্দিটা পরিচালক করলেন এবং আমাদের সিনেমার শেষটা দেখাইয়া ছাড়লেন, এটা হইলো গিয়া দ্বন্দ্ব।

কেন এই প্রসঙ্গ আনলাম? তার ব্যাখ্যা করি। সিনেমা বানাতে গেলে এই দ্বন্দ্বটা থাকা চাই। এবং দ্বন্দ্বটা কীসের সঙ্গে কীসের তাও পরিস্কার থাকা চাই। নইলে গরবর হয়ে যাবে। যিনি এই গল্পটি লিখেছিলেন তিনি পরিস্কার ছিলেন এ ব্যাপারে। তাই তার গল্পটি সবাই গোগ্রাসে গিলেছে। যদিও গল্পটি এই বিজ্ঞানের সময়ে সম্পূর্ণ এন্টি লজিক্যাল ছিল। যারা এটাকে জিন ভূতের গল্প বলতে চান, তাঁরা অন্ধকারে আছেন। কেন? বুইঝা লইয়েন। তবে যেহেতু গল্পকার তার গল্পের থিম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন তাই তিনি লজিক্যাল সময়ে এন্টি লজিকস এর মতো একটা জিনিস লজিক্যালওয়ালাদের খাইয়ে ছেড়েছেন। আপনি যদি এমন একটা গল্পের এসেনস নিয়ে নিজের গল্প বলতে চান, তাহলে আপনাকে গল্পকারের থেকেও শক্তিশালী গল্পকার হতে হবে। কারণ একদিকে একটা প্রতিষ্ঠিত গল্পের এসেনস, অন্যদিকে আপনার নিজস্ব গল্পের থিম। এই দুয়ের যদি সম্মিলন না ঘটে তাহলে গরবর হবে, এই স্বাভাবিক। একটা ঘটনা দেখবে সবাই, কিন্তু যার কোনো এসেনস বা দ্বন্দ্ব বা কেন্দ্রীয় থিম থাকবে না। এই জায়গায় পরিচালক মোক্ষম ধরা খাবেন। পরিচালক কেবল আশে পাশে ঘুরবেন। এই ছবির বেলায় যা হলো আরকি।তাই তো ছবিটির যে কেন্দ্রীয় থিম ছিল তার ধারে কাছেও না ঘেঁষে, সাইকোথ্রিলার ও হরর সিনেমার মিশেলে ছবিটি এগোতে থাকে। যার মধ্যে স্পষ্টত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাই ছবির শেষে চরিত্রকে মুখে বলিয়ে নিতে হয় দ্বন্দ¦টি। চরিত্রটি বলে, পৃথিবীতে এমন অদ্ভুত কিছু আছে যার সমাধান এখনো হয় নাই। এই অদ্ভুত জিনিসটাই ছিল ছবির দ্বন্দ্বের মূল বিষয়। যেখানে পরিচালক কেবল অদ্ভুত বিষয়টির আশে পাশেই ঘুরেছেন। অথচ অনেক চমতকারভাবে লজিক্যাল চিরত্রটির বিরুদ্ধে অ্যান্টি লজিক্যাল চরিত্রটিকে খাড়া করে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারতেন। অনেকে বলবেন, এটা তো ছিল। আমি বলব। আমি তো বলিনি ছিল না। ছিল কিন্তু পরিচালক তাকে ফোকাস করতে পারেননি। ডিফোকাস ছিল। কেবল আশ পাশ দিয়ে ঘুরেছেন। কারণ যিনি এই গল্পটি লিখেছেন সেই গল্পকার কেবল লজিক্যাল চরিত্রটির সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাই আপনি তাঁকে সাইকোলজির অধ্যাপক বানিয়েছেন। কিন্তু তার এন্টি চরিত্রটিকে তিনি কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেননি। তাই এই চরিত্রটি আপনি নির্মাণ করতে পারেননি। আপনি তাই গোঁজামিল দিয়েছেন। সাইকোথ্রিলার আর হরর এর মিশেলে চরিত্রটিকে ধামাচাপা দিয়েছেন। অথচ এই চরিত্রটি গল্পকার এমনিতেই কল্পনা দিয়ে তৈয়ার করেননি। এই চরিত্রটি ভারতীয় উপমহাদেশের লৌকিক ধর্মের প্রতীক। কেউ যদি বনবিবি সম্পর্কে জানেন তাহলে এটা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। তাই গল্পকার তার সময়ে অতিচতুরতার সঙ্গে এই বিজ্ঞানের যুগেও একটি লজিক্যাল চরিত্রের মধ্যে লৌকিক ধর্মের উপাদান ঢুকিয়ে চরিত্রটি এন্টি লজিক্যাল বানিয়েছেন এবং লজিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক সাহেবের সামনে খাঁড়া করেছিলেন। এই যে গল্পকারের চতুরতা এটি ধরতে পারেননি পরিচালক। তাই দ্বন্দ্ব তৈরির একটা মোক্ষম সুযোগ উনি নষ্ট করেছেন। আপনারা প্রশ্ন করবেন, তাহলে এত যে বুলি কবচাচ্ছেন মশায়। আপনি বলেন তো, ওই চরিত্রটিকে কোন চরিত্র করলে অধ্যাপকের মুখোমুখি খাঁড়া করে দেওয়া যেত। আর তাদের দুজনের দ্বন্দ্বে এগিয়ে যেত ছবিটি। আমি বলি, এ আমার কাজ না। আমিও এই ছবিটি বানালে হয়তো একই ভুলই করতাম। ছবি দেখে অনেক কিছু বলা যায়। বানানোটা অনেক কঠিন। গল্পকার একা গল্পটি লিখেছিলেন। তাই যেকোনো কিছু করার অবাধ স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু ছবি এক দঙ্গল লোকবল নিয়ে করতে হয়। হাজারটা ঝামেলা সামনে এসে খাঁড়া হয়। এরই মধ্যে প্রযোজক ও পরিচালক দুজনই নতুন। তারা যে এমন একটি কঠিন গল্পকে সিনেমায় রূপ দেওয়ার সাহস করেছেন এই ঢের। টুপি খোলা অভিনন্দন জানাতে হয় তাদের।

তারপরেও একটু বলে রাখি। পরিচালক যদি ধম্মকম্ম নিয়ে একটু পড়ালেখা করতেন তাহলে তাঁকে সাইকোথ্রিলার আর হরর-এর গোঁজামিল দিতে হত না। ভারতীয় লৌকিক ধর্মে ডিভাইন পাওয়ার নিয়ে বিস্তর আলাপ আছে। ওই ধরুণ না বনবিবির কথা। লজিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপকের সামনে ডিভাইন পাওয়ারওয়ালা এক আধুনিক নারীকে খাঁড়া করে দিন না। যাকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এই শহরের আট দশটা মেয়ের মতো। কিন্তু ভেতরে সে একজন বনবিবি। ডিভাইন পাওয়ার আছে তাঁর। বনবিবির আছে বলে মানুষ যেমন বিশ্বাস করে। পূজা দেয়। এই শহরের মেয়েটিও তাই। তারা তো পূজা দেওয়ার সময় লজিক্যাল ইলজিক্যাল নিয়া ভাবে না। তাই না? ডিভাইন পাওয়ার আর লজিকের দ্বন্দ্ব দিয়া ফিলিম কবে শেষ অইয়া যাইতো দর্শক টেরও পাই তো না। আর যদি আরেকটু চালাক হন, তাইলে ডিভাইন পাওয়ারের একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাইয়া ছাইড়া দিতেন। দর্শক হা হইয়া বাড়ি ফিরত। সেই ব্যাখ্যাটি কী? তার কিঞ্চিত উদাহরণ দিব এই লেখার শেষ দিকে।আমি শুরুতে কইছিলাম একখান সিনেমা সিনেমা খেলা খেলব। তা না কইরা আজাইরা প্যাচাল পারলাম। যাগো মাথা ধরছে তারা একটা নাপা খাইয়া মাথায় সরিষার তেল দিয়া ঘুমান। আর যাগো মাথা এখনো ধরে নাই তারা পড়তে থাহেন। আপনি যদি একটা সিনেমা বানাইতে চান, তাহলে আপনার কষ্ট কইরা গল্প খোঁজার কোনো দরকার নাই। আপনি ধরে নিন, আমার এই গল্পগুলো আপনার ছবির এক একটা গল্প। অমি আপনার প্রোটাগোনিস্ট। আমার মধ্যে ডিভাইন পাওয়ার আছে। আপনার এই প্রোটাগোনিস্ট যা বলে তা ঘটে যায়। এটা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির অধ্যাপক। কুল কিনারা খুঁজে পান না। এই ছেলে যা বলে তা ঘটে কীভাবে। আসলে তা ঘটে না। এইগুলো আপনার প্রোটাগনিস্টের কল্পনা। আপনার প্রোটাগোনিস্ট একটু বেশি বুদ্ধিসম্পন্ন। তাই ঘটনাগুলো অনুমান করতে পারে। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটা বস্তু মহাজগাতিক আন্ত:সম্পর্কে বাধা। তাই কোনো কিছু ঘটার আগেই আপনার প্রোটাগোনিস্ট টের পেয়ে যান।

আপনি যদি চলচ্চিত্রের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তবে আমার এই গল্প দিয়েই আপনি নেমে পড়তে পারেন দারুণ একটি ছবি বানাতে। এই ছবির গল্পগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই। মনে আছে? লিফটের চরিত্রের সঙ্গে নেই তসলিম হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক। তবে ছবি দাঁড়াবে কীভাবে? এর ব্যাখ্যা আছে। ছবির প্রোটাগোনিস্টের সঙ্গে প্রত্যেকটা গল্পের সম্পর্ক আছে। এভাবে একটি কেন্দ্রকে ধরে কয়েকটি আলাদা গল্প যখন এগিয়ে যায় সেটাও চলচ্চিত্র হয়। চলচ্চিত্রজনেরা তার নাম দিয়েছেন অ্যান্থলোজি চলচ্চিত্র। এটাই আসলে সিনেমা সিনেমা খেলা। আমারও প্যাঁচাল পাড়া হলো, আপনারও সিনেমা বানানো হলো।

সে যাই হোক। তারপরও আমি কই এই ছবি হউক। আরও বেশি বেশি হউক। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশে দুই ধরনের সিনেমা হয়। আতলামি সিনেমা আর ফাতরামি সিনেমা। অনেকদিন ধইরা আশায় ছিলাম এর মাঝামাঝি একটা সিনেমা হওয়া দরকার। যে সিনেমা আবার দর্শককে হলে নিয়ে যাবে। অত আঁতলামিও মাথায় ঢুকাতে হইব না আর ফাতরামিও দেখতে অইব না। আমার মনে হয় মাঝামাঝির সিনেমার চল শুরু অইয়া গেছে। আবার মধ্যবিত্ত হলে যাওয়া শুরু করব। বাংলা ছবি আবার বেদের মেয়ে জোসনার মতো আয় করব। তার মধ্যে কি একটা দুইটা সূর্য দীঘল বাড়ি কিংবা মাটির ময়না হইব না? হইবো। সেই আশার আলো জ্বেলে দিয়ে গেলেন নতুন এই পরিচালক ও প্রযোজক।