চলচ্চিত্র: দখল
পরিচালক: গৌতম ঘোষ
কলাকুশলী: মমতা শঙ্কর, রবিন সেন গুপ্ত, সুনীল মুখার্জি
দেশ: ভারত
সাল: ১৯৮১
রেটিং: ৩/৫
সংগীত এবং চিত্রগ্রহণ করেছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ নিজেই। ক্যামেরার কাজ সিম্পল। মুভমেন্ট কম। পরিচালক গৌতম ঘোষ নিজে ভাল মানের সিনেমাটোগ্রাফার হওয়া সত্বেও ক্যামেরার মুভমেন্টে ভেরিয়েশন না থাকাটা খটকা লেগেছে। হতে পারে একা সব সামলাতে গিয়ে কিছুটা এদিক-সেদিক হয়েছে। জুম শট ব্যাবহার করেছেন। যদিও অনেকের কাছে সিনেমায় জুম ইন-আউটের ব্যবহার অপছন্দনীয়। ছবিটা রঙিন । তবে ডিভিডি ভার্সনের প্রিন্ট অতি খারাপ হওয়াতে লাইট বোঝা দু:স্কর। মিউজিক সংযত। সিনেমার গান বলতে যা বোঝায় তা নেই। দৈর্ঘ্য-১ ঘন্টা ৮ মিনিট। আঞ্চলিক ভাষার নিপুণ ব্যবহার চরিত্রের সাথে মানানসই এবং সংযত কথোপকোথন :
“এক ছটাক জমির জন্যে এত খুন খারাবী দেখলাম। এত পাপ ভগবান সইবে না। ঐ যে নদী, ওর সংঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁধ বেধেছি, নোনা মাটি- নোনা মাটিতে আবাদ করে ফসল ফলিয়েছি।
এর কিছু মানে আছে, যুক্তি ও আছে। অন্ধকারে “আন্দি”র ঘরটা যে জ্বালিয়ে দিল এর যুক্তি কি? এর জন্য কি এজ্লাস বসবে? বলো. . .বলোতো তোমরা . . . ”
আন্দি হিরোইনের নাম। স্বামী, সন্তান নিয়ে নদীর চরে এসে ঘর বাঁধে। এরা কাগমারা নামে একটি উপজাতি পরিবার। (এই উপজাতিটি সম্বন্ধে আমার জ্ঞান সীমীত, শুধু জানি এরা নদীর চরে অথবা নৌকায় যাযাবর জীবন যাপন করতো, আজ এদের অস্তীত্ব আছে না বিলীন হয়ে গেছে জানি না। ৪৭ এর দেশ ভাগ আমাদের অনেক দিয়েছে, অনেক নিয়েছে।) আন্দির স্বামী মারা যায় সাপের কামড়ে। অসহায় আন্দির ভিটে-মাটি কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লাগে গাঁয়ের মোড়ল। শেষমেস রাতের আধারে আন্দির ঘরে আগূন লাগিয়ে দেয় মোড়লের লোক।
গাঁয়ে যে আন্ধির পক্ষে দাঁড়াবার মত, প্রতিবাদ করার মত লোক ছিল না তা নয়। সব সমাজেই কিছু না কিছু ভাল লোক থাকে। তবে তারা অনেকাংশেই নিরূপায় হয়। এরকম কয়েকজন আন্দির ঘর পুরে যাবার পরে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিল আর অক্ষেপ করে উপরের কথাগুলো মন্তব্য করছিল।
সত্যিই , এক ছটাক জমির জন্য আমরা কত কি-ই না করি! খুন-খারাবী, উচ্ছেদ…
সেটা ছিল জমিদার আমল। তারা ছিল অশিক্ষিত, বর্বর আর একালে অমরা শিক্ষীত, সিভিলাইজড, বনশ্রী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকি। এরকম অবাসিক এলাকা বানাতে গিয়ে আন্ধীর মতো অনেক পরিবারের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেই।
Leave A Comment